কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আল্লাহর রহমত ও বরকত বহন করে আসা ঈদুল আযহার আনন্দে মুখরিত সময়। এই সময় কোরবানি করা একটি মহৎ কাজ, যা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। কোরবানির মাংস শুধু খাওয়ার জন্য নয়, বরং এটি বিতরণের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে। কোরবানি আসলেই আমাদের মনে অনেক গুলো প্রশ্ন জাগ্রত হয়, যেমনঃ কোরবানি কার নামে দিতে হয়, কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম, ঋণ থাকলে কি কোরবানি হয় কি না, কোরবানির গরুর বয়স কত হতে হবে এবং কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় ইত্যাদি সহ আরো অনেক প্রশ্ন।

কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয়

যাইহোক, এই আর্টিকেলটিতে এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আর্টিকেলটি পড়লে আশা করি, কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় এই বিষয়টি সহ সকল বিষয়ে আপনারা সঠিক ধারণা পাবেন।

কোরবানি অর্থ কি

কোরবানি শব্দটি আরবি শব্দ "কুরবান" থেকে এসেছে, যার অর্থ "নৈকট্য"। ইসলামে, কোরবানি বলতে বোঝায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জবাই করা পশু।

কোরবানির দোয়া

কোরবানির পশু জবাই করার সময় নিচে উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে হবে।
১) পশু ক্বিবলামুখী করে শোয়ানোর পরঃ
আল্লাহুম্মা হাযহী মিন্নি ওয়া লাকা ফাতাকাব্বাল্লাহু মিন্নি
অর্থঃ হে আল্লাহ! এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আপনার জন্য। তাই আমার কোরবানি গ্রহণ করুন।
২) জবাই করার সময়ঃ
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার
অর্থঃ আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।

৩) জবাই করার পরঃ

আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল্লাহু মিন্না কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিন ওয়া খলিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাম
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার কোরবানি গ্রহণ করুন, যেমন আপনি আপনার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং আপনার বন্ধু ইব্রাহীম (আঃ)-এর কোরবানি গ্রহণ করেছিলেন।
কোরবানির মাংস বিতরণের সময় নিম্নে উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে হবে।
আল্লাহুম্মা জা’াল্না মিনাল মুত্তাক্বীন ওয়া জা’াল্না মিনাল মুফলিহীন
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের (আল্লাহ্‌পরায়ণদের) সাথে করুন এবং আমাদেরকে সফলদের মধ্যে করুন।

কোরবানির পুরো সময় নিচের দোয়া পাঠ করতে হবে।
আল্লাহুম্মা মিন্কা ওয়া লাকা
অর্থঃ হে আল্লাহ! এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনার জন্য।
উল্লেখ্য যে, এছাড়াও আরও অনেক দোয়া রয়েছে যা কোরবানির সময় পড়া যেতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে দেয়া হলো
কোরবানির দোয়া মনে মনে বা জোরে পড়া যেতে পারে।
দোয়া পড়ার সময় আন্তরিকতা থাকা জরুরি।
কোরবানির নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিত।
কোরবানি কার নামে দিতে হয়
বেশির ভাগ মানুষই জানেনা কোরবানি কার নামে দিতে হয়। তাই নিচে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আরো জানুনঃ আরবি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

কোরবানি নিজের নামে দেওয়া হয়। নিচে এই সম্পর্কে কিছু হাদিস তুলে ধরা হলোঃ
হাদিসে বর্ণিতঃ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজের নামেই কোরবানি দিতেন। [বুখারী, হাদিস ৫৫৫৬]
কোরবানির উদ্দেশ্যঃ কোরবানির উদ্দেশ্য হল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি
অর্জন করা। নিজের নামে কোরবানি দেওয়ার মাধ্যমেই এই উদ্দেশ্য পূরণ হয়।
সহজবোধ্যঃ নিজের নামে কোরবানি দেওয়া সবচেয়ে সহজবোধ্য ও স্পষ্ট
তবে, অন্যের নামেও কোরবানি দেওয়া যাবে

মৃত ব্যক্তির নামেঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি দেওয়া একটি সুন্দর আমল। এতে মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পাওয়া যায়। [ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৪২০]
আত্মীয়স্বজনের নামেঃ নিজের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনদের নামেও কোরবানি দেওয়া যাবে।
গরিবদের নামেঃ গরিবদের জন্য কোরবানি দেওয়াও একটি উত্তম কাজ। তবে অবশ্যই কোরবানি দেওয়ার সময় মনে রাখা উচিত
নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি দেওয়া উচিত।
কোরবানির পশু অবশ্যই সুস্থ, দোষমুক্ত এবং নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে।
শরিয়ত অনুযায়ী জবাই করতে হবে।
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম
কোরবানির পশু জবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিষয় যা শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী করতে হবে। 

নীচে কোরবানির পশু জবাই করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম দেওয়া হলো

১) পশুর অবস্থাঃ
পশু অবশ্যই সুস্থ, দোষমুক্ত এবং নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে।
অসুস্থ, আহত, অন্ধ, এক পা খাড়া, এক চোখ বন্ধ, এক কান কাটা ইত্যাদি পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়।
পশুর বয়স হতে হবেঃ
গরু/বাছুরঃ ২ বছর বা তার বেশি
উটঃ ৫ বছর বা তার বেশি
ছাগল/ভেড়াঃ ১ বছর বা তার বেশি

২) জবাই করার পূর্বেঃ
জবাই করার আগে পশুর সাথে ভালো আচরণ করতে হবে।
পশুকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।
জবাই করার জন্য ছুরি ভালো করে ধারালো করে নিতে হবে।
জবাইকারী ব্যক্তি অবশ্যই মুসলিম ও সুস্থ হতে হবে।

৩) জবাই করার পদ্ধতিঃ
পশুকে ক্বিবলামুখী করে শোয়াতে হবে।

"বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে ছুরি দিয়ে দ্রুত গলা কেটে ফেলতে হবে।
খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী একসাথে কাটতে হবে।
রক্ত পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

৪) জবাই করার পরঃ
জবাই করার পর "আল্লাহুম্মা হাযহী মিন্নি ওয়া লাকা ফাতাকাব্বাল্লাহু মিন্নি" দোয়া পড়তে হবে।
পশুর চামড়া উত্তোলন করে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজের জন্য, আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং গরিবদের জন্য বিতরণ করতে হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে মেনে চলতে হবে
জবাই করার সময় পশুর উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না।
ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করা যাবে না।
জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে।
জবাই করা পশুর মাংস দ্রুত সময়ের মধ্যে রান্না করে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয়
কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় এই বিষয়টি আমাদের দেশের অনেক কিছু কনফিউশন আছে। যাইহোক, নিচে কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও, হাদিসে তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করার কথা বলা হয়েছে।

হাদিসে প্রেরিতঃ
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজের কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করতেন। [বুখারী, হাদিস ৫৫৫৭]
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ) তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করার কথা বলেছেন। [আবু দাউদ, হাদিস ২৮২৯]

১) তিন ভাগে ভাগ করা
উত্তম হলো কোরবানির গোস্ত তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করা।
এক ভাগ নিজের জন্যঃ নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের খাওয়ানোর জন্য।
এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্যঃ যারা চায় না তাদেরও দেওয়া।
এক ভাগ গরিবদের জন্যঃ  যারা চায় এবং না চায় তাদেরও দেওয়া।

২) গরিবদের অংশ
গরিবদের অংশ অবশ্যই বিতরণ করা।
এটি কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
গরিবদের অংশ আলাদা করে রেখে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

৩) ন্যায়সঙ্গত আচরণ
সকলের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা।
আত্মীয়স্বজনদের অংশ বেশি এবং গরিবদের অংশ কম করে দেওয়া যাবে না।

৪) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
মাংস পরিষ্কার করে ভালোভাবে রান্না করে বিতরণ করা।
মাংসের অপচয় এড়িয়ে চলা।

৫) সময়
কোরবানির গোস্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণ করার চেষ্টা করা।
যত দ্রুত বিতরণ করা যাবে ততই ভালো।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত

কোরবানির গোস্ত বিতরণ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা।
গরিবদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।
আশা করি, এই আলোচনা থেকে কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় সেই বিষয়ে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

আরো জানুনঃ আ দিয়ে মেয়েদের ৫০ টি ইসলামিক নাম অর্থসহ

ঋণ থাকলে কি কোরবানি হয়

ঋণ থাকলে কোরবানি হবে কিনা এ বিষয়ে ইসলামী আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

কিছু আলেমের মতেঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, যতক্ষণ না সে তার ঋণ পরিশোধ করে। তাদের যুক্তি হল, কোরবানির জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির যদি ঋণ পরিশোধের পর নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।

অন্য আলেমদের মতেঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উপরও কোরবানি ওয়াজিব, যদি সে ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখে। তাদের যুক্তি হল, কোরবানি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখে, তাহলে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কোরবানি দিতে পারে।
কোন মতটি সঠিক তা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও আর্থিক পরিস্থিতির উপর।
আপনার যদি ঋণ থাকে এবং আপনি কোরবানি দিতে চান, তাহলে একজন বিশ্বস্ত আলেমের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে
আপনার ঋণের পরিমাণ কত?
আপনি কি ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম?
কোরবানি না দেওয়ার ফলে আপনার কি কোন পাপ হবে বলে মনে হয়?
আপনি কি যদি কোরবানি না দেন তাহলে অন্যদের কাছে লজ্জিত বোধ করবেন?
আপনার সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, মনে রাখবেন যে কোরবানি হল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপায়। আপনি যদি নিষ্ঠার সাথে এবং সঠিক উদ্দেশ্যে কোরবানি দেন, তাহলে আশা করা যায় যে আল্লাহ আপনাকে গ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য যে, আমি একজন ধর্মীয় পণ্ডিত নই। ঋণ ও কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়ে আমার যে মতামত দেওয়া হয়েছে তা বিভিন্ন ইসলামী পন্থি থেকে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে। ঋণ ও কোরবানি সম্পর্কে সঠিক নির্দেশিকা পেতে একজন বিশ্বস্ত আলেমের সাথে পরামর্শ করা সর্বোত্তম।

কোরবানির গরুর বয়স কত হতে হবে

ইতিপূর্বে আমরা কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় এবং কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম সহ বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন জানবো কোরবানির গরুর বয়স কত হতে হবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত।

কোরবানির গরুর বয়স নির্ধারণের জন্য ইসলামে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। গরুর বয়স নির্ণয়ের দুটি প্রধান পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো। 

দাঁতের মাধ্যমে

দুই বছর পূর্ণ হওয়াঃ

নিচের দাঁতের সারিতে সামনে থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দাঁত (দুইটি মেয়দানি দাঁত) পড়ে যায় এবং তাদের পরিবর্তে নতুন দাঁত গজায়।
এই অবস্থাকে "সালিক" বলা হয়।
তিন বছর পূর্ণ হওয়াঃ
উপরেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
তৃতীয় ও চতুর্থ দাঁত পড়ে যায় এবং তাদের পরিবর্তে নতুন দাঁত গজায়।
এই অবস্থাকে "থানি" বলা হয়।
শিংয়ের মাধ্যমে
|দুই বছর পূর্ণ হওয়াঃ
শিংয়ের গোড়ায় একটি ছোট গিঁট বা বক্ররেখা দেখা যায়।

তিন বছর পূর্ণ হওয়াঃ

শিংয়ের গোড়ায় দ্বিতীয় গিঁট বা বক্ররেখা দেখা যায়।
কোরবানির জন্য গরুর বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে দাঁতের মাধ্যমে নির্ণয় আরও নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়। তবে, উভয় পদ্ধতিতে নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হলেই গরু কোরবানির জন্য যথাযথ বলে বিবেচিত হবে।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন,
অন্ধ, পঙ্গু, রোগাক্রান্ত, বা দুর্বল গরু কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়।
ষাঁড় কোরবানির জন্য উপযুক্ত।
গাভী কোরবানির জন্য উপযুক্ত। তবে, গর্ভবতী গাভী কোরবানি করা যাবে না।
কোরবানি সম্পর্কে কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)

কোরবানি কি?

কোরবানি হলো ঈদুল আযহার সময় আল্লাহর নির্দেশে পশুবলি দেওয়ার একটি ইসলামী রীতিনীতি। এটি হজ্বের একটি অপরিহার্য অংশ এবং ইব্রাহিম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।

কোরবানি কখন দেওয়া হয়?

কোরবানি ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে ঐদুল আযহার পরবর্তী তিন দিনের যেকোনো একদিন দেওয়া যায়।

কোরবানি কারা দিতে পারেন?

নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণকারী সকল মুসলিমের জন্য কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
সুস্থ হওয়া
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা
নিসাব হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য, নগদ অর্থ, খাদ্যশস্য, পশুধন ইত্যাদির মূল্য।

আরো জানুনঃ রোজা রাখার শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উপকারিতা সম্পর্কে

কোরবানির পশু কেমন হতে হবে?

কোরবানির পশু অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ ও দোষমুক্ত হতে হবে।

গরু, ছাগল, ভেড়া এই তিন প্রকারের পশুই কোরবানির জন্য যোগ্য।

একজন ব্যক্তি কি একাধিক পশু কোরবানি দিতে পারেন?

হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি একাধিক পশু কোরবানি দিতে পারেন।
কোরবানির মাংস কিভাবে ভাগ করা উচিত?
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নেওয়ার রীতি সুন্নত।
এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য
এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য
এক ভাগ গরিব ও অভাবীদের জন্য
কোরবানির মাংস কিভাবে বিতরণ করা উচিত?
কোরবানির মাংস দ্রুততম সময়ে বিতরণ করা উচিত।

কোরবানির সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

কোরবানির পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে।
জবাই করার সময় পশুকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না।
কোরবানির মাংস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
কোরবানির মাংস বিতরণের সময় গরিব ও অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করতে হবে।

উপসংহার

কোরবানির মাংস বিতরণ শুধু একটি কর্মকাণ্ড নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। এই মাধ্যমে আমরা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারি। আসুন আমরা সকলে মিলে আল্লাহর নির্দেশ মেনে কোরবানির মাংস সঠিকভাবে বিতরণ করে ঈদের আনন্দকে আরও বর্ধিত করি।

আশা করি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে কোরবানি কার নামে দিতে হয়, কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম, ঋণ থাকলে কি কোরবানি হয় কি না, কোরবানির গরুর বয়স কত হতে হবে এবং কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয় ইত্যাদি সকল বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। ধন্যবাদ

পুর্বের পোস্ট পরবর্তী পোস্ট